মৎস্য বিভাগের সনদ জটিলতার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মাছ রফতানি বন্ধ আছে। সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে অনলাইনে সনদ নিতে না পারায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মাছ রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। এতে রফতানিকারকরা বিপাকে পড়েছেন। এর সমাধান না হলে প্রতিদিন অন্তত দেড় কোটি টাকার রফতানি আয় কমার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। কবে রফতানি চালু হবে, সে বিষয়েও নিশ্চিত নন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ৫০ থেকে ৭০ টন হিমায়িত মাছ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় রফতানি হয়। প্রতি কেজি ২ দশমিক ৫ মার্কিন ডলারের রুই, কাতল, পাঙাশ, তেলাপিয়া ও পাবদাসহ দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ রফতানি হয়। এসব মাছ ও শুঁটকি রফতানির সনদ দেয় মৎস্য বিভাগ। এতদিন ধরে মৎস্য কার্যালয় সেই সনদ ম্যানুয়ালভাবে (সনাতন পদ্ধতি) দিয়ে আসছিল। ১৩ নভেম্বর এ সনদ অনলাইন করার নির্দেশনা দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে মৎস্য অধিদফতর এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করায় আজ থেকে বিল অব এন্ট্রি করতে পারছেন না রফতানিকারকরা।
আখাউড়া স্থলবন্দর মৎস্য রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মাছ পাঠানোর জন্য একটি বিশেষ সার্টিফিকেট উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে নিতে বলা হয়। কিন্তু অনলাইনে সনদটি করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নেয়নি। এনবিআর এ চিঠি কাস্টমস ও মৎস্য মন্ত্রণালয়কে দেয়নি। বুধবার প্রায় দুই কোটি টাকার মাছ রফতানির প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তখন মৎস্য কার্যালয়ের মাধ্যমে সার্টিফিকেট আনতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। এক কর্মকর্তার বিশেষ অনুমতি নিয়ে নানান প্রক্রিয়া শেষে ভারতে মাছ পাঠানো হয়। তবে আজ সকাল থেকে অনলাইন সার্টিফিকেট ছাড়া মাছ পাঠানো যাবে না বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।’
আখাউড়া উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো (বিএসডব্লিউ) থেকে আমরা অনলাইন রেজিস্ট্রেশন পেয়েছি। এখন মাছ পাঠানোর বিষয়ে ব্যবসায়ীদের অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এতে মাছ রফতানি বন্ধ থাকবে না, শুধু কাজটি অনলাইনের মাধ্যমে করতে হবে। ব্যবসায়ীরাসহ আমরা রফতানি সচলের চেষ্টা করছি।’
বিষয়টি নিয়ে কোয়ালিটি কন্ট্রোলের সঙ্গে সম্পর্কিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘এনবিআর ১৯ নভেম্বর থেকে অনলাইন সার্টিফিকেটের মাধ্যমে মাছ রপ্তানির বিষয়ে চিঠি দিয়েছে। বিষয়টি আগে আমাদের জানায়নি এবং চিঠিও দেয়নি।’
এ বিষয়ে বর্তমানে করণীয় সম্পর্কে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের একটি আইডি খুলতে হবে। এ বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বর্তমানে সব প্রক্রিয়া চলছে।’
আখাউড়া স্থলবন্দর মৎস্য রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নেছার উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সার্টিফিকেট প্রদানে জটিলতার কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। গতকাল বন্দরে কিছু মাছ এসেছিল। কিন্তু সার্ভার জটিলতা ও কাগজপত্র জমা দিতে না পারায় মাছগুলো রফতানি করা সম্ভব হয়নি। এতে করে রফতানি আয় কমার আশঙ্কা রয়েছে।’

















