চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে বিএনপি মনোনীত এমপি প্রার্থীর মনোনয়ন পুনর্বিবেবচনার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর আবেদন জানিয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ১১ নেতা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।
এই আসনে প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের নাম ঘোষণা করেছে দল। এ নিয়ে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ বা সভা সমাবেশ না করলেও দলীয় কোন্দলের কারণে নেতাকর্মীদের একটি অংশ অসন্তুষ্ট।
বিএনপির উপজেলা শাখার দলীয় প্যাডে ১১ নেতা স্বাক্ষরিত চিঠিটির কপি সাংবাদিকদের হাতে এসেছে।
এতে বলা হয়েছে, আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ও মীরসরাই উপজেলা শাখার বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ। সম্প্রতি চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে দলের পক্ষ থেকে নুরুল আমিন চেয়ারম্যানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যিনি মনোনয়ন পেয়েছেন, তার বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে নানা অভিযোগ ও অসন্তোষ বিদ্যমান। তার বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পর মীরসরাইয়ে সংগঠিত বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সমঝোতাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। অপরাধ প্রমাণিত হওয়া একজন বহিষ্কৃত নেতাকে বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার হওয়ার পর মনোনয়ন দেওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি এবং সাধারণ জনগণের একটি বৃহৎ অংশ এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন ও হতাশ। সাধারণ মানুষ মাঠ পর্যায়ে উত্তর খুঁজছে কেন একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়েছে।
এ ছাড়াও এশিয়ার সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল, জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ব্যবসায়ী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো তার মনোনয়ন প্রাপ্তিতে উদ্বেগের কথা আমাদের জানিয়েছেন। বর্তমান প্রার্থীর বিতর্কিত ভাবমূর্তি এবং মাঠ পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতার ঘাটতির কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, এ আসনে দলের বিজয় সম্ভাবনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দলের দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ ও জনগণের আস্থা রক্ষার স্বার্থে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ মত দল যদি একজন ক্লিন ইমেজধারী, ত্যাগী ও জনগণের আস্থাভাজন নেতাকে পুনরায় মনোনয়নের সুযোগ দেয়, তাহলে চট্টগ্রাম-১ আসনটি বিএনপির জন্য একটি নিশ্চিত বিজয়ের আসনে পরিণত হবে। এ ছাড়া এ আসন থেকে ১৯৯৬ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়েছিলেন। এ আসনের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার সম্মানও অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।
অতএব, মীরসরাইয়ের তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পক্ষ থেকে বিনীত অনুরোধ চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনের মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা করে যোগ্য, গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
চিঠিতে ১১ নেতার স্বাক্ষর দেখা গেছে তারা হলেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রফেসর এমডি এম কামাল উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন, মীরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল আউয়াল চৌধুরী, মীরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, মীরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অলিউল কবির ইকবাল, মীরসরাই উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আজিজুর রহমান চৌধুরী, মীরসরাই উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াদ আমিন খান, বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মাঈন উদ্দীন লিটন, বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব জসিম উদ্দীন কমিশনার, মীরসরাই পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক জামশেদ আলম কমিশনার, মীরসরাই পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুল ইসলাম লিটন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের একজন মীরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মীরসরাই উপজেলায় একের পর এক বিতর্কিত কার্যক্রমের জন্য বহিষ্কৃত হন নুরুল আমিন। তাকে তড়িঘড়ি করে দলে ফিরিয়ে প্রার্থী করার বিষয়টি উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশই মেনে নিতে পারেননি। এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে প্রার্থী করলে এই আসনে বিএনপির বিজয় অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তাই যারা দলের দুঃসময়ে মাঠে থেকে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের মধ্য থেকে যে কাউকে প্রার্থী করার আবেদন জানানো হয়েছে।
ওমরা হজ পালন করতে দেশের বাইরে থাকায় মীরসরাই আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী নুরুল আমিনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে নুরুল আমিনের অনুসারী মীরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘মীরসরাইয়ের জননন্দিত নেতা নুরুল আমিনকে প্রার্থী করার আগেও এমন চিঠি পাঠানো হয়েছিল। বিএনপি বড় দল। অনেক যাচাই-বাছাই ও বিচার-বিশ্লেষণ করেই নুরুল আমিনকে প্রার্থী করা হয়েছে। তাই আমাদের অনুরোধ, অপতৎপরতা না চালিয়ে দল যাকে প্রার্থী করেছে, তাকে জয়যুক্ত করতে সবাই যেন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেন।’
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, চিঠিটি তারেক রহমানের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

















