Swadhin News Logo
বুধবার , ২৬ নভেম্বর ২০২৫ | ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. best
  2. cassinoBR
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও প্রকৃতি
  5. ক্যাম্পাস
  6. খেলাধুলা
  7. চাকরি
  8. জাতীয়
  9. জোকস
  10. তথ্যপ্রযুক্তি
  11. দেশজুড়ে
  12. ধর্ম
  13. নারী ও শিশু
  14. প্রবাস
  15. বই থেকে

বিচারকের ছেলেকে হত্যার কারণ জানিয়ে ৫ ঘণ্টা জবানবন্দি লিমনের

প্রতিবেদক
Nirob
নভেম্বর ২৬, ২০২৫ ১১:০২ অপরাহ্ণ
বিচারকের ছেলেকে হত্যার কারণ জানিয়ে ৫ ঘণ্টা জবানবন্দি লিমনের

রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের বাসায় ঢুকে তার ছেলেকে হত্যা ও স্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় গ্রেফতার লিমন মিয়া (৩৪) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিকালে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এর বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। বিকাল ৩টায় শুরু হয়ে আসামির জবানবন্দি রাত ৮টা পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়। পাঁচ ঘণ্টায় সাত পৃষ্ঠার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। রাতেই তাকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

গ্রেফতার লিমন মিয়া গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের মদনেরপাড়া গ্রামের এইচএম সোলায়মান শহিদের ছেলে। ১৩ নভেম্বর বেলা আড়াইটার দিকে রাজশাহী নগরের ডাবতলা এলাকায় বিচারকের বাসায় ঢুকে ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে (১৫) কুপিয়ে হত্যা করেন লিমন। এ সময় বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসীকে (৪৪) কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ধস্তাধস্তির সময় আহত হওয়ায় লিমনকে একই হাসপাতালে পুলিশের হেফাজতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তার বাবা সোলায়মান শহিদ ফুলছুড়ি উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও লিমন ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক।

রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, জবানবন্দিতে লিমন বলেছেন, পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে বিচারকের স্ত্রীর কাছ থেকে অভাব-অনটনের কথা বলে মাঝেমধ্যে টাকা-পয়সা নিতেন। এই টাকা-পয়সা নেওয়াটা নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। এতে বিরক্ত হয়ে গত কয়েক মাস ধরে বিচারকের স্ত্রী লিমনকে এড়িয়ে চলছিলেন। এমনকি তার ফোন ধরাও বন্ধ করে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হন। ১৩ নভেম্বর বিকালে রাজশাহীর বাসায় গেলে বিচারকের স্ত্রী তাকে দেখে চলে যেতে বলেন। কিন্তু লিমন যেতে অস্বীকার করলে বিচারকের স্ত্রী ঘরের দরজা বন্ধ করে ফোনে পুলিশ ডাকার চেষ্টা করেন। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরের দরজা ভেঙে বিচারকের স্ত্রীর ওপর ধারালো ছুরি নিয়ে হামলা করেন। এ সময় মায়ের চিৎকার শুনে অন্য ঘরে থাকা ছেলে বাঁচাতে গেলে লিমন তাকে ছুরিকাঘাত করেন। এতে বিচারকের ছেলে নিহত হন এবং স্ত্রী গুরুতর জখম হন। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে নিজের ছুরিতেই দুই হাতের তালু কেটে যায় লিমনের। যে ছুরিতে বিচারকের ছেলে নিহত হন, সেটি লিমন সঙ্গে করে এনেছিলেন। পরে বাসার জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় লিমনকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এর বিচারক মামুনুর রশিদের খাস কামরায় হাজির করা হয়। বিচারক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার আগে লিমনকে কিছু সময় ভাববার সময় দেন। নিজে থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চান কিনা, তাও জানতে চান বিচারক। পরে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেবেন বলার পর রেকর্ড শুরু করেন বিচারক।

তার জবানবন্দির বরাতে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, লিমন জবানবন্দিতে আরও বলেছেন, ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীর চাকরি চলে যাওয়ার পর কিছু সময় হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। এ সময় মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। পরে গাইবান্ধা শহরে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে ভর্তি হন। সেখানেই পরিচয় হয় বিচারকের স্ত্রীর সঙ্গে।
বিচারকের স্ত্রীর বাবার বাড়ি গাইবান্ধা শহরে। ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হওয়ায় লিমনের অভাব-অনটন ও চাকরি চলে যাওয়ার কথা শুনে আর্থিক সাহায্য করতেন বিচারকের স্ত্রী। বিভিন্ন সময়ে ও বিভিন্ন প্রয়োজনে আর্থিক সহায়তা পান লিমন। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হন লিমন। সম্প্রতি বিচারকের স্ত্রী সিলেটে যান মেয়ের বাসায়। লিমন খবর পেয়ে গত ৩ নভেম্বর সিলেটে যান। তার টাকার খুব প্রয়োজন জানালে দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে ঝামেলা করলে পুলিশ ডাকলে তাকে আটক করে নিয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, এরপর জামিনে মুক্তি পেয়ে বিচারকের মেয়ের মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন লিমন। এ নিয়ে বিচারকের স্ত্রী গত ৬ নভেম্বর সিলেট মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এতে আরও ক্ষিপ্ত হন। ফোনে তাকে হত্যার হুমকি দেন। বিচারকের স্ত্রী সিলেট থেকে রাজশাহীতে ফিরেছেন তথ্যটি কৌশলে জেনে নেন।

জবানবন্দিতে লিমন আরও বলেছেন, আগে থেকেই বিচারকের রাজশাহীর বাসা চিনতেন। কারণ আগে একবার এসেছিলেন। বিচারকের ভাই পরিচয়ে ভবনের ফটক পার হয়ে যখন বাসায় প্রবেশ করেন, তখন তাকে দেখে বিচারকের স্ত্রী ক্ষিপ্ত হন। বাইরে বসতে বলেই ঘরের দরজা বন্ধ করে কাউকে ফোন করছিলেন। তখন ধরেই নিয়েছিলাম পুলিশ ডেকে আবার ধরিয়ে দেবেন। এ অবস্থায় মাথা ঠিক রাখতে পারেননি। ব্যাগ থেকে ছুরি বের করে ঘরের দরজা ভেঙে ফেলেন। তখন দেখেন বিচারকের স্ত্রী কাউকে তার বিষয়ে বলছিলেন। তখন ছুরি দিয়ে শরীরের কয়েকটি জায়গায় এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। মায়ের চিৎকার শুনে অন্য ঘর থেকে ছেলে এসে মাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন তাকেও ছুরিকাঘাত করেন।

এ ঘটনায় গত ১৪ নভেম্বর মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বাদী হয়ে লিমনকে আসামি করে রাজপাড়া থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই দিনই বিচারকের পৈতৃক নিবাস জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ীর রুদ্র বয়রা চকপাড়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে ছেলেকে দাফন করা হয়। ১৫ নভেম্বর লিমনকে প্রথম দফায় পাঁচ দিন ও ২০ নভেম্বর দ্বিতীয়বার আদালতে হাজির করে আরও পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। দ্বিতীয় দফা রিমান্ডের শেষ দিন ২৫ নভেম্বর লিমন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘বিচারকের ছেলে হত্যা ও স্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা মামলার চার্জশিট দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে জমা দেওয়া হবে।’

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক

আপনার জন্য নির্বাচিত