Swadhin News Logo
শুক্রবার , ২৮ নভেম্বর ২০২৫ | ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. best
  2. cassinoBR
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও প্রকৃতি
  5. ক্যাম্পাস
  6. খেলাধুলা
  7. চাকরি
  8. জাতীয়
  9. জোকস
  10. তথ্যপ্রযুক্তি
  11. দেশজুড়ে
  12. ধর্ম
  13. নারী ও শিশু
  14. প্রবাস
  15. বই থেকে

ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রাজশাহীর অনেক ভবন, মানা হয়নি ‘বিল্ডিং কোড’

প্রতিবেদক
Nirob
নভেম্বর ২৮, ২০২৫ ৮:১২ পূর্বাহ্ণ
ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রাজশাহীর অনেক ভবন, মানা হয়নি ‘বিল্ডিং কোড’

রাজশাহী শহরের অধিকাংশ ভবন ‘বিল্ডিং কোড’ বা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মেনে তৈরি হয়নি। এটি নগরীর বাসিন্দাদের জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে। বিশেষ করে ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে শত শত বহুতল ভবন ঘিরে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সবশেষ দেশজুড়ে অনুভূত ভূমিকম্পের পর নগরীর ভবনগুলোর নিরাপত্তা ঝুঁকি আবার সামনে এসেছে সবার। এ নিয়ে চিন্তিত নগরের বাসিন্দারা।

বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহরের প্রায় ৮০ শতাংশ ভবনই বিধিমালা মেনে নির্মাণ করা হয়নি। অনুমোদিত নকশার ব্যত্যয় ঘটেছে। অনেক ভবন মালিক অনুমোদিত নকশার বাইরে গিয়ে নির্মাণকাজ করেছেন। যেমন পাঁচতলার অনুমোদন নিয়ে সাততলা বা আটতলার অনুমোদন নিয়ে দশতলা করেছেন। এ ছাড়া অধিকাংশ ভবনে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। ভবনগুলো গা ঘেঁষে তৈরি হওয়ায় জরুরি পরিস্থিতিতে উদ্ধারকাজ কঠিন হতে পারে। অনেকে ভবন নির্মাণ অনুমোদনকারী সংস্থা রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সংস্থাটি তদারকি না করায় এমনটি হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।

সবশেষ বৃহস্পতিবার বিকালে, এর আগে ২১ নভেম্বর সকালে ও ২২ নভেম্বর সকালে একবার ও সন্ধ্যায় একবার ভূকম্পন হওয়ায় এই আতঙ্ক আরও বেড়েছে। এই ভূকম্পনের পর নগরীর ভবনগুলোর নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে ভাবছেন সবাই। রাজশাহীতে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে অনেক ক্ষতিও হবে আশঙ্কা অনেকের। 

জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর তথ্যমতে, রাজশাহী বিভাগে মোট বসতবাড়ি ৫১ লাখ ২৮ হাজার। গ্রামে ৪১ লাখ ৭ হাজার এবং শহরে ১০ লাখ ২০ হাজার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নকশা না মেনে ভবন করা, গুণগত মানসম্পন্ন নির্মাণ উপকরণসামগ্রী ব্যবহার না করায় বেশি ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ভূমিকম্প হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানো ও পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর যথাযথ প্রস্তুতি ও সুযোগ-সুবিধাও নেই তেমন। এজন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে।

মানা হয়নি ‘বিল্ডিং কোড’

নগরের একাধিক বাসিন্দা বলেছেন, আরডিএর অনুমোদন প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে নিরাপত্তাহীন বহুতল ভবনের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। আবাসিক এবং বাণিজ্যিক উভয় ধরনের ভবনের ক্ষেত্রে আরডিএ নকশা অনুমোদন দিলেও অনেক ভবন ফায়ার সার্ভিসের নিরাপত্তা সনদ ছাড়াই নির্মাণ হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক বছরে মহানগর এলাকায় প্রায় ১ হাজার ৩০০ নতুন ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ১০০ ভবন সাততলা পর্যন্ত এবং বাকি ২০০ ভবন ৮ থেকে ২০ তলা পর্যন্ত। 

অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নকশা অনুমোদন নেওয়া হয়েছে; এমনকি যেসব ভবনের সামনে-পেছনে প্রয়োজনীয় রাস্তা নেই, সেগুলোরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত, রাষ্ট্রীয় ও বাণিজ্যিক তিন ক্যাটাগরিতে ডেভেলপাররা কাজ করে থাকেন। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অধিকাংশ প্রকল্প পেয়েছে এবং নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজ করেছে। যা নগরীর বাসিন্দাদের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করেছে। ভবন নির্মাণের সময় আটটি স্তরে অনুমোদন নিতে হয় উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। এগুলো হলো- ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র, নির্মাণ অনুমোদন, নির্মাণকাজ শুরু অবহিতকরণ ও কারিগরি ব্যক্তিদের সম্মতিপত্র, ভবনের ভিত্তি স্তম্ভ পর্যন্ত কাজ সম্পর্কে কারিগরি ব্যক্তিদের প্রতিবেদন, ভবনের নির্মাণকাজ সমাপ্তি অবহিতকরণপত্র, কারিগরি ব্যক্তিদের প্রত্যয়নপত্র, ব্যবহার সনদ ও পাঁচ বছর পর ব্যবহার সনদ নবায়ন। তবে নগরীরতে গড়ে ওঠা অধিকাংশ ভবনের নকশা অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনুমোদনের পরের ধাপগুলো অনুসরণ করা হয়নি।

ভূমিকম্প প্রতিরোধী কোনও ব্যবস্থা নেই

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিরভাগ ভবনে ভূমিকম্প প্রতিরোধী কোনও ব্যবস্থা নেই। এমনকি আরডিএ কোনও ধরনের তদারকি করেনি। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে এগুলোর বেশিরভাগ পুরোপুরি ধসে পড়বে। কিছু আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে প্রচুর মানুষ হতাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের বিপর্যয় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর প্রস্তুতিতে ঘাটতি রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন, আরডিএ; কারও প্রস্তুতি নেই। উদ্ধার তৎপরতার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও নেই। আবার অনেক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে ঘিঞ্জি এলাকায়। কোথাও কোথাও গলিগুলো এমন সরু, সেখানে উদ্ধারকারী গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স যাওয়ার সুযোগ পর্যন্ত নেই।

ভূমিকম্পের ঝুঁকি বিবেচনায় আবহাওয়া অধিদফতরের মানচিত্র অনুযায়ী, দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভূমিকম্পের ঝুঁকি মানচিত্রের ‘নিম্ন ঝুঁকিপ্রবণ’ বা জোন-৩-এর আওতাভুক্ত। এর মধ্যে রাজশাহী আছে জোন-২ এ। বিভাগের পশ্চিমাংশ কিছু অংশ জোন-২-এর হলেও পশ্চিমাংশ অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অঞ্চলগুলো মূল টেকটোনিক প্লেট বাউন্ডারি যেমন: ডাউকি ফল্ট, মধুপুর ফল্ট বা মিয়ানমার ফল্ট লাইন থেকে অপেক্ষাকৃত দূরে থাকায় সরাসরি বড় ধরনের কম্পন সৃষ্টির উৎস হিসেবে বিবেচিত হয় না। তবে কেন্দ্রস্থল থেকে অনেক দূরে হলেও গত শুক্রবারের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল রাজশাহী বিভাগের অনেক স্থাপনা আর অবকাঠামো। বড় ক্ষয়ক্ষতি না হলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলের ভবন হেলে পড়াসহ বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়।

শিক্ষার্থীদের দাবি, ভূমিকম্পে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা ফজলুল হক হল ভবন হেলে পড়াসহ হলের দেয়াল, করিডর, সিঁড়ি, বিভিন্ন স্থানে নতুন করে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে তারা আতঙ্কিত।

মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ রাজশাহী

ভূমিকম্পের জন্য মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ রাজশাহী অঞ্চল। বিভাগের পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অংশ বিশেষ মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। রাজশাহীর ঝুঁকি নিয়ে ২০২২ সালে গবেষণা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। ২০২৩ সালে ওই গবেষণা আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়। গবেষণার তথ্যমতে, ১৯৫০ সালের পরে রাজশাহীর জিরো পয়েন্ট থেকে ৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে ১০৫১টি, ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ভূমিকম্প হয়েছে ৫টি। শেষ ১০ বছরে হয়েছে প্রায় অর্ধেক।

তাদের তথ্যমতে, ১৮৮৫ সালের ১৪ জুলাই বগুড়া চ্যুতির কেন্দ্রস্থলে সিরাজগঞ্জ-বগুড়া অঞ্চলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ১৮৯৭ সালের ১২ জুন শিলং মালভূমিতে উৎপত্তি হওয়া ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে বগুড়া ও পাবনায় ব্যাপক ক্ষতি ও প্রাণহানি হয়। ১৯৯১ সালের ৭ আগস্ট নওগাঁ ও রাজশাহী অঞ্চলে ৫ এবং ২০১৮ সালে নাটোর-রাজশাহীতে ৪.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। ২০২২ সালের ১ জুন সিরাজগঞ্জে ৪.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। ২০২৩ সালেও কেঁপে ওঠে রাজশাহী।

শঙ্কা বাড়ছে উত্তরাঞ্চলে 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মারুফ বলেন, ‘এ অঞ্চলে মাটির তৈরি কাঁচা বাড়ির আধিক্য রয়েছে। এখানে ৫ বা ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। কম্পন মাত্রা, ব্যাপ্তি ও ধ্বংসযজ্ঞ বিবেচনায় ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পকে মহাভূমিকম্প বলা হয়। এতে বগুড়া ও পাবনাসহ রাজশাহী অঞ্চলে কাঁচা বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল।’

ভূমিকম্পের পরম্পরা বিশ্লেষণ করে ড. আব্দুল্লাহ আল মারুফ বলেন, ‘প্রায় ৪০০ বছর আগে এ অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছিল। এরপর ছোট ও মাঝারি ভূমিকম্প হয়েছে। টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে বহু বছর ধরে বিপুল শক্তি সঞ্চিত রয়েছে। এই শক্তির কারণে আগামীতে উত্তরাঞ্চলে শঙ্কা বাড়ছে।’

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সরানোর দাবি

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল। সুজনের রাজশাহীর প্রধান আহমদ শফি উদ্দিন বলেন, ‘এভাবে ভবন নির্মাণ মানুষের জীবনের জন্য ভয়াবহ হুমকি। রানা প্লাজার মতো ঘটনা ঘটলে কিছুই করার থাকবে না। তাই কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের।’

সুরক্ষা ও স্থাপনার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে আরডিএ

তবে নগরবাসীর সুরক্ষা ও স্থাপনার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে আরডিএ। ২৫ নভেম্বর সকাল ১০টায় আরডিএ কার্যালয়ে ভবন নির্মাণে ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন দুর্যোগে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আরডিএ চেয়ারম্যান এসএম তুহিনুর আলম। সভায় উপস্থিত ছিলেন, রুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. নিয়ামুল বারী, অধ্যাপক ড. আবু সুফিয়ান জিয়া হাসানসহ আরডিএর বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীরা।

সভায় আরডিএ চেয়ারম্যান এসএম তুহিনুর আলম বলেন, ‘রাজশাহীকে নিরাপদ নগরীতে পরিণত করতে আরডিএ সর্বোচ্চ আন্তরিক। ভবন নির্মাণে অনিয়মের জায়গা নেই। জনগণের জীবনই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘রাজশাহী দ্রুত পরিবর্তনশীল নগরী। এখানে যে গতি ও পরিসরে ভবন নির্মাণ হচ্ছে, তা ইতিবাচক। তবে উন্নয়ন কখনও মানুষের জীবনের নিরাপত্তার বিনিময়ে হতে পারে না। সাম্প্রতিক ভূমিকম্প আমাদের সতর্ক করেছে যে, ভবন নির্মাণে নিয়মনীতির প্রশ্নে কোনও ধরনের অনিয়ম বরদাশত করা হবে না।’

আরডিএ চেয়ারম্যান এসএম তুহিনুর আলম বলেন, ‘আমরা চাই রাজশাহীর ভবনগুলো হোক টেকসই, নিরাপদ ও আধুনিক প্রযুক্তির আলোকে নির্মিত। এজন্য স্ট্রাকচারাল ডিজাইনে বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোডের প্রতিটি ধাপ কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। বিশেষ করে ভূমিকম্প লোড গণনায় অসচেতনতা বা ইচ্ছাকৃত ভুল ভবিষ্যতে ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। আরডিএ এ বিষয়ে আরও কঠোর হবে।’

 

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক

আপনার জন্য নির্বাচিত