রংপুর সিটি করপোরেশনে গুরুত্বপূর্ণ তিন কর্মকর্তার পদ শূন্য হওয়ায় সেখানকার জরুরি পরিসেবাসহ সব ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে গেছে। এক মাসেরও বেশি সময় ধারদেনা করে চলছে সিটি করপোরেশনের জরুরি পরিসেবা কার্যক্রম। বার বার লিখিতভাবে জানানোর পরও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
এদিকে নভেম্বর মাসের বেতন পাওয়া নিয়ে আবারও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদবীর কর্মকর্তা যোগদান না করলে এ মাসের বেতন দেওয়া সম্ভব হবে না করপোরেশনের দুই হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর। অক্টোবর মাসের বেতন মন্ত্রণালয়ে বলে কয়ে এক কর্মকর্তার চেকে স্বাক্ষরের অনুমতি নিয়ে ১০ নভেম্বর দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষর ছাড়া কোনও চেক ইস্যু করা যায় না। কিন্তু গত ১৩ অক্টোবর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমা অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যান। অন্যদিকে সচিব জয়শ্রী রানী সেপ্টেম্বর মাসে এবং একই মাসে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বদলি হয়ে চলে যান। ফলে দুই মাস ধরে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পদ শূন্য হয়ে আছে। এসব পদে কাউকেই পদায়ন করা হয়নি।
সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, করপোরেশনের যেকোনও ফাইলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রশাসকের স্বাক্ষর ছাড়া কোনও কাজই করা যায় না। বিশেষ করে আর্থিক বিষয়ে ফাইলে ও চেকে ওই কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষর ছাড়া কোনও অর্থ উত্তোলন করা যায় না। এখানে তাদের যৌথ স্বাক্ষর থাকতেই হবে।
অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা না থাকায় গুরুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। এতে নগরবাসী চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে কয়েকশ বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্ল্যান পাস করা, নগরীর জনগুরুত্বপূর্ণ কোনও কাজই হচ্ছে না।
অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের কাজের বিল পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে নগরীর খামার এলাকার বাসিন্দা আকবর হোসেন অভিযোগ করেন, তার বাসার মাস্টার প্ল্যান ফি-সহ জমা দিলেও দুই মাস ধরে কোনও কাজ হচ্ছে না।
একই অভিযোগ করেন কেরানীপাড়া মহল্লার মমতাজ বেগমসহ অনেকেই।
এদিকে প্রকৌশল শাখার এক কর্মকর্তা জানান, নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও ড্রেন জরুরিভাবে সংস্কার করা প্রয়োজন হলেও অর্থের অভাবে করা যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন শাখা বিশেষ করে যান্ত্রিক, প্রকৌশল, স্বাস্থ্য শাখার কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ধারদেনা করে ও বাকিতে জরুরি কাজ করতে হচ্ছে।
এদিকে হিসাব শাখা সূত্রে জানা গেছে, রংপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে ৮০০ বেশি পরিচ্ছন্নতা কর্মী আছেন। যারা অস্থায়ী ভিত্তিতে দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। তাদের মাসিক বেতন ৪৫ লাখ টাকা। একইভাবে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক বিভিন্ন বিভাগে আরও ৮০০ বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন যাদের মাসিক বেতন গত মাসে ১০ তারিখে দেওয়া গেলেও এ মাসে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্বীকার করেন, তিন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বদলিজনিত কারণে না থাকায় নানান সমস্যা হচ্ছে। জরুরি পরিসেবা নগরবাসীকে দেওয়া যাচ্ছেনা। তবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে একজনকে পদায়ন করার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

















