পাবনা শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ চত্বরে দাঁড়িয়ে হাজারো মানুষ গলায় ঝোলানো প্ল্যাকার্ডে, হাতে ধরা ফেস্টুনে ও ক্ষোভ প্রকাশ করে মানববন্ধনে দাবি তুললেন, ‘দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান চাই’। শেকড় পাবনা ফাউন্ডেশনের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনটি রবিবার সকাল ১১টা থেকেই ছড়িয়ে পড়ে শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায়।
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিক্ষক, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, সাংবাদিক, পেশাজীবী, রাজনীতিবিদ সবার দাবি, ‘রেল, সড়ক, ফেরি আর আকাশপথে চলাচলের সমান সুযোগ চাই। পাবনা আর ঢাকার মাঝে দ্রুত, সরাসরি ট্রেন চাই।’
মানববন্ধনে কাজিরহাট ফেরিঘাটকে খয়েরচরে সরিয়ে আনার দাবিও ছিল জোরালো। বক্তারা বলেন, ‘এটা হলে দুই ঘণ্টার পথ মাত্র ১৫ মিনিটে পার হওয়া যাবে। এতে শুধু সময় নয়, মানুষের জীবনযাত্রা বদলে যাবে। যোগাযোগ মানেই উন্নয়ন। আর সেই উন্নয়ন আমরা পাইনি।’
ঈশ্বরদী ইপিজেড ও রূপপুর প্রকল্পের মতো মেগা উন্নয়ন প্রকল্প থাকার পরেও বিমানবন্দর বন্ধ থাকা নিয়ে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চলছে, সেখানে বিমানবন্দর বন্ধ পড়ে থাকা মানে উন্নয়নের প্রতি অবজ্ঞা।’
পাবনা শহরের যানজট ও সংকুচিত রাস্তার কথা উঠে আসে মানববন্ধনে। বক্তারা জানান, ‘চার লেন সড়ক ছাড়া এই শহরের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সময় থাকতে ব্যবস্থা না নিলে, পাবনা একদিন স্থবির হয়ে পড়বে।’
পাবনার পুরনো দাবি নতুন করে সামনে আসে নগরবাড়ি আরিচা হয়ে দ্বিতীয় যমুনা সেতু নির্মাণ। বক্তারা বলেন, ‘এই সেতু এই অঞ্চলকে বদলে দিতে পারে। তাই এটা শুধু পাবনার দাবি নয়, এটা রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের দাবিও।’
ইছামতী নদী খনন এবং মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে বক্তারা বলেন, ‘নদীখনন মানে শুধু পানি নয়, এটা শহরের ফুসফুস। যারা মামলা করেছেন, তারা যেন ভাবেন তাদের কারণে একটা শহর থেমে যাচ্ছে।’
পাবনা মেডিক্যাল কলেজ ও মানসিক হাসপাতালের জরাজীর্ণ অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে তারা বলেন, ‘এগুলো যদি উন্নত না হয়, তাহলে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। পাবনাবাসীর জীবন বিপন্ন হবে।’
এ ছাড়াও বক্তারা স্মরণ করিয়ে দেন, এই চত্বরেই একসময় দুই শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। সেই ঘটনায় এখনও খুনিরা ধরা পড়েনি। ‘এই শহীদ চত্বরে দাঁড়িয়ে আমরা আবারও দাবি জানাই, অপরাধীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিন,’ বলেন তারা।
শেষ মুহূর্তে একজন বক্তা বলেন, ‘আমরা এখনো শান্তিপূর্ণভাবে বলছি। কিন্তু পাবনার দাবি যদি এভাবে অগ্রাহ্য করা হয়, তাহলে একদিন এই শহরের নীরব জনতা কথা বলবে প্রচণ্ড গর্জনে।’
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন শেকড় পাবনা ফাউন্ডেশনের সভাপতি খান হাবিব মোস্তফা। সঞ্চালনায় ছিলেন আতাইকুলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক রাজু ইসলাম ওলি। উপস্থিত ছিলেন পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার, সাবেক সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা মো. ইকবাল হোসাইন, পৌর আমির আব্দুল লতিফ, শিল্পী ওবায়দুল্লাহ তারেক, মাহফুজুর রহমান, রোটারিয়ান বিনয় জ্যোতি কুন্ডু, সমন্বয়ক শাওন হোসাইন, আইডিয়াল গ্রুপের পরিচালক সিরাজুল ইসলামসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।