বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের সমালোচনা করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক অন্তবর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের হাজারো শহীদের শাহাদাতের রক্তের মঞ্চে দাঁড়িয়ে যে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই সরকার নতুন ষড়যন্ত্রের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’
শনিবার (১৯ জুলাই) বিকালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
‘শাপলা চত্বর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার বিচার ও খেলাফত সৃষ্টির আন্দোলনে গণজোয়ার সৃষ্টির লক্ষ্যে’ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কুড়িগ্রাম জেলা শাখা এই গণসমাবেশের আয়োজন করে।
মামুনুল হক বলেন, ‘ড. ইউনুসকে আমরা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন কার্যালয় বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ওয়াশিংটনের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র করলে তা রুখে দেওয়া হবে। বর্তমান সরকারকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, যদি মানবাধিকার কমিশনে কার্যালয় বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করা হয় তাহলে বাংলাদেশের জনগণের ম্যান্ডেট নিতে হবে। রাজনৈতিক সরকার এ সিদ্ধান্ত নেবে। তিন দিনের অস্থায়ী মেহমান সরকার এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখে না। সকল রাজনৈতিক দলের মতামত নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার অ্যাজেন্ডা আমাদের স্পষ্ট জানা রয়েছে। তারা পৃথিবীর দেশে দেশে নির্লজ্জ অশালীনতা, মানবাধিকারের নামে সমকামিতার মতো অভিশাপকে চাপিয়ে দেয়। আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই, বাংলাদেশের ধর্মীয় অনুভূতিকে যদি আঘাত দেওয়া হয় এবং সমকামিতাকে বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে গোটা বাংলাদেশ কারবালার প্রান্তরে পরিণত হবে।’
স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে চব্বিশের বাঙালি জাতির ত্যাগের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে খেলাফত মজলিসের এই নেতা বলেন, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পশ্চিম পাকিস্তানি আধিপত্যবাদী শক্তিকে বিতাড়িত করেছি। আমাদের স্বপ্ন ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এ দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হলেও স্বাধীনতার পর তিনি চলে গেলেন লন্ডনে। লন্ডন থেকে তিনি দেশে না ফিরে গেলেন দিল্লিতে। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী শেখ মুজিবের মুজিব কোটে একটি চিরকুট ভরিয়ে দিলেন। সেই চিরকুটের মাধ্যমে নির্ধারণ করে দিলেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য। বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতাকে তিনি হত্যা করলেন।’
মামুনুল হক বলেন, ‘প্রিয় সাথীগণ। ১৯০৫ সালে, ১৯৪৭ সালে, ১৯৭১ সালে বারবার আমরা জীবন দিয়ে রক্ত দিয়ে বিজয় অর্জন করেছি। কিন্তু আমাদের বিজয়কে বারবার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ছিনতাই করা হয়েছে। ঠিক একইভাবে আমরা দেখেছি বিগত ১৫ বছর বাকশালী ফ্যাসিবাদের নতুন রূপ, নতুন আওয়ামী জাহেলিয়াত। লেডি ফেরাউন নামে খ্যাত শেখ হাসিনা তার জুলুম এবং নির্যাতনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে নিষ্পেষিত করেছে। মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি করেছে। এ দেশের মানুষের ভাগ্য, অর্থনীতির ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে দিল্লি থেকে। গুম-খুন এবং হত্যাকাণ্ডের স্বর্গরাজ্য হয়েছিল বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘চব্বিশের জুলাইয়ের মাধ্যমে এ দেশের ছাত্র-জনতা শেখ হাসিনার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাণিজ্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বারবার আমরা বিজয় অর্জন করেছি। আমাদের পূর্বপুরুষেরা রক্ত দিয়েছেন। আর ষড়যন্তকারীরা ষড়যন্ত্রের ডানা মেলে আমাদের বিজয়কে ছিনতাই করেছে। আমরা একবার পিন্ডির গোলামির জিঞ্জির ছিন্ন করেছিলাম। আমাদেরকে নতুন করে দিল্লির দাসে পরিণত করার চেষ্টা করা হয়েছে। ২০২৪ সালে আমরা দিল্লির গোলামির শিকল ভেঙে খান খান করেছি।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে খেলাফত মজলিস নেতা বলেন, ‘আমি বর্তমান সরকারের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাতে চাই, এ দেশের মানুষ আপনাদেরকে অনেক সম্মান দিয়েছে, অনেক ভালোবাসা দিয়েছে। মানুষের ধসে পড়া অর্থনৈতিক ভিত নতুন করে গঠন করুন। বিগত রেজিমের পাচার করা লক্ষ লক্ষ ডলার ফিরিয়ে এনে দেশের মানুষের কল্যাণে বিনোয়োগ করার চেষ্টা করুন। বিগত দিনের অ্যাজেন্ডা বাতিল করুন। বাংলাদেশের মানুষ যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে সেই অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করুন।’
সংগঠনের জেলা কমিটির সভাপতি মুফতি ইব্রাহিম খলিল নোমানীর সভাপতিত্বে সমাবেশে দলটির কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

















