ঢাকার উত্তরায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানের দুর্ঘটনায় নিহত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমা আখতারের (৯) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে তার মরদেহ বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার কুনিয়া গ্রামে পৌঁছায়, যেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। ফাতেমার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো গ্রামজুড়ে।
সরেজমিনে গিয়ে স্বজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাত্র ছয় মাস আগেই একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গ্রামের বাড়িতে এসেছিল চঞ্চল ও প্রাণবন্ত মেয়েটি। মিষ্টি হাসি আর দস্যিপনায় তখন মাতিয়ে রেখেছিল পুরো বাড়ি। আজও সে ফিরেছে, কিন্তু ফিরেছে নিথর দেহে—চিরতরে নিঃশব্দ।
মঙ্গলবার সকালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ফাতেমার মরদেহ কুনিয়া গ্রামে পৌঁছানোর পর স্বজনদের সঙ্গে ছুটে আসেন গ্রামের শত শত মানুষ। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে হৃদয়বিদারক দৃশ্য। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। যেন কারও মুখে সান্ত্বনার ভাষাও নেই। ফাতেমার মা-বাবা, চাচা, খালা, মামা ও প্রতিবেশীরা তাকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে ভিড় করেন।
জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় ফাতেমাকে। শোক আর কান্নায় ভেঙে পড়েন তার পরিবার। কিছুতেই তারা মেনে নিতে পারছেন না এই নির্মম বাস্তবতা।
নিহত ফাতেমা আখতার কুয়েতপ্রবাসী বনি আমিন শেখ ও গৃহবধূ রূপা দম্পতির বড় মেয়ে। তিন ভাইবোনের মধ্যে সে ছিল সবার বড়। মা ও ভাইবোনদের সঙ্গে সে ঢাকায় থাকত। ফাতেমা ও তার ছোট ভাই, ৬ বছর বয়সী ওসমান, একই প্লে-গ্রুপে পড়ত। শরীরে জ্বর থাকায় ওসমান সেদিন স্কুলে যায়নি—এটাই হয়তো তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ ফাতেমার মা-বাবা। শোকে পাথর হয়ে যান বাবা বনি আমিন, যিনি মেয়ের মৃত্যুর খবর শুনেই কুয়েত থেকে দ্রুত দেশে ফিরে এসেছেন।
নিহতের চাচা ইউসুফ আলী শেখ বলেন, ‘এই মেয়েটি আমাদের মাঝে নেই—এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। নিজের হাতে তাকে কবরে শুইয়ে দিয়েছি।’ কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা নিরাপদ স্থানে বিমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন, যেন ভবিষ্যতে আর কোনও পরিবারকে এমন অশ্রুসিক্ত বিদায়ের মুখোমুখি না হতে হয়।

















