গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করতে টুঙ্গিপাড়ায় মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের ৮২ জনের নাম উল্লেখ করে টুঙ্গিপাড়া থানায় মামলা করা হয়েছে। এতে আরও ২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও গোপালগঞ্জ সদর থানায় পৃথক আরেকটি মামলা করা হয়েছে।
বুধবার (২৩ জুলাই) বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন টুঙ্গিপাড়া থানার ওসি খোরশেদ আলম। মঙ্গলবার রাতে ওই থানার এসআই মনির হোসেন বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি করেন।
মামলার এজাহার বলা হয়েছে, গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশ নস্যাৎ করার লক্ষ্যে টুঙ্গিপাড়ার (পিরোজপুর-ঢাকা) মহাসড়ক অবরুদ্ধ করে টায়ার জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচলে বাধা ও জনগণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের পক্ষে মিছিল করতে থাকে। এ ছাড়া মহাসড়কের আশপাশে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করার চেষ্টা করে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা ও সমাবেশ ঘিরে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে জেলা কারাগারের জেলার বাদী হয়ে সদর থানায় আরেকটি মামলা করেন।
সদর থানার ওসি মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে জেলার তানিয়া জামান বাদী হয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি নিউটন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানসহ ১৬০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০০০ জনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন।
টুঙ্গিপাড়া থানার ওসি খোরশেদ আলম বলেন, গত ১৬ জুলাইয়ের পর থেকে টুঙ্গিপাড়ায় মামলার এজাহার নামীয় ২৩ জনসহ মোট ২৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে হওয়া এ মামলায় নতুন করে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। আর নিরপরাধ কোনও ব্যক্তি যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়টি মাথায় রেখেই পুলিশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, সারা দেশে মাসব্যাপী পদযাত্রার অংশ হিসেবে বুধবার গোপালগঞ্জে যান এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। এর আগে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রাতে এটিকে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ হিসেবে উল্লেখ করেন দলটির কয়েকজন নেতা। এরপর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গোপালগঞ্জের স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এটি প্রতিহতের ঘোষণা দেন।
এনসিপির নেতাদের গাড়িবহর গোপালগঞ্জে যাওয়ার পথে পথে বাধা পায়। সকালে পুলিশ এবং ইএনওর গাড়িতে হামলা চালানো হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের দায়ী করা হয়।
দুপুরে গোপালগঞ্জের পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশস্থলে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। হামলার কিছুক্ষণ পর সেখানে পৌঁছান এনসিপির নেতারা। তারা সেখানে স্লোগান ও বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে তারা মাদারীপুরের উদ্দেশে রওনা দিলে তাদের গাড়িবহর ঘিরে হামলা করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এনসিপি নেতাদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। এতে এখন পর্যন্ত পাঁচ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত জেলার থানাগুলোতে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। মামলার আসামি কয়েক হাজার। গ্রেফতার করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে।