গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘শহীদের দেওয়া প্রাণকে যদি আমরা মর্যাদা দিতে চাই, নিজেদের ভবিষ্যৎকে তৈরি করতে চাই, তাহলে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষায় আমাদের নতুন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে হবে। লুটপাট, দুর্নীতি আর দখলদারির অর্থনীতিকে বহাল রেখে এবং বিভাজনের সংস্কৃতি বজায় রেখে বাংলাদেশে আমরা কোনও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে পারবো না। এই অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বন্দোবস্ত বদলাতে হবে। তার ওপর দাঁড়াবে নতুন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।’
রবিবার (২৭ জুলাই) বিকালে টাঙ্গাইল শহীদ মিনারে গণসংহতি আন্দোলন জেলার উদ্যোগে আয়োজিত জুলাই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি টাঙ্গাইলের সন্তোষে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মাজারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও মাজার জিয়ারত করেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ছাড়া গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত টিকতে পারবে না। এর জন্য গণমানুষের রাজনৈতিক দল দরকার, যারা গণমানুষের স্বার্থ রক্ষা করবে। শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষ, কর্মচারী, ছাত্র-তরুণ সবার স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে এমন জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তিকে আমাদের গড়ে তুলতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে যারা রক্ত দিয়েছেন তারা জনগণের বাংলাদেশের দিকে আমাদের নতুন যাত্রার দিশারী। আজকে শহীদদের মায়েদের এখানে বলতে হচ্ছে, আমাদের শহীদদের হত্যার এখনও বিচার হয়নি। শহীদরা এখনও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পাননি। আমাদের আহতরা এখনও সম্পূর্ণ চিকিৎসা পাননি। শহীদদের পরিবারের ও আহতদের জীবনের দায়িত্ব নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা পরিষ্কার করে বলি, আপনারা অভ্যুত্থানের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। এইগুলো আপনাদের প্রথম দায়িত্ব ছিল।’
আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ কায়েমের কথা তুলে ধরে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন পঞ্চদশ সংশোধনী করলো, তখনই পরিষ্কার বোঝা গেছে, তারা একটা ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করতে চায়। নিজেদের শাসনকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত করার জন্য তাদের বাসনাকে সহায়তা করেছে আমাদের দেশের সাংবিধানিক স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামো। এই কথা গণসংহতি আন্দোলনের জন্মলগ্ন থেকে বলে আসছি। বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক দল ও নেতা তখন পর্যন্ত এটা মানতে নারাজ ছিলেন। তারা ভেবেছেন, আমাদের এই সংবিধান হলো মহৎ সংবিধান। আমরা বলেছি, এই সংবিধান মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর দাঁড়িয়ে হয়েছে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা, তার জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা– সেই আকাঙ্ক্ষা সংবিধানে প্রতিফলিত হয়নি। সে কারণে সমস্ত ক্ষমতা একজন ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে। যিনি প্রধানমন্ত্রী হন তার হাতে সব ক্ষমতা, তিনিই পুরো রাষ্ট্রটা পকেটে ঢুকিয়ে স্টিমরোলার চালিয়েছেন। এটাই ১৯৭২ সাল থেকে এ দেশের মানুষের অভিজ্ঞতা।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে যে ক্ষোভের বারুদ জমেছিল, এবারের গণঅভ্যুত্থানে তাতে স্ফুলিঙ্গ হয়ে আসলো একটা স্বপ্ন, একটা লক্ষ্য– এবার রাষ্ট্র ব্যবস্থা বদলাবে। এই স্ফুলিঙ্গ দাবানল তৈরি করলো যেদিন আবু সাঈদ আর ওয়াসিমরা নিজের বুকে গুলি নিয়ে নিলেন। দেশের মানুষের মুক্তির জন্য নিজেদের উৎসর্গ করে তারা এ দেশের মানুষের ক্ষোভকে দাবানলে পরিণত করে দিলেন। এই আত্মত্যাগ সারা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। মানুষ স্বপ্ন ছাড়া ঐক্যবদ্ধ হয় না।’
সমাবেশে বক্তব্য দেন– শহীদ মারুফ মিয়ার মা মোর্শেদা বেগম, আহত জুলাই যোদ্ধা ফাতেমা খানম, আকাশ রহমান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন জেলার সভাপতি ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ফাতেমা রহমান বিথী, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সংগঠক তুষার আহমেদ, শহীদ মোহাম্মদ ইমনের ভাই মোহাম্মদ সুজন, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য আলিফ দেওয়ান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন জেলার দফতর সম্পাদক প্রেমা সরকার, টাঙ্গাইল পৌর কমিটির আহ্বায়ক আদিবা হুমায়রাসহ অনেকে।