জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, ‘জুলাই শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা যখন একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের জন্য যাত্রা শুরু করেছি, শহীদ ও আহতদের স্বপ্ন রচনা করতে যাচ্ছি, তখন দেখতে পাচ্ছি একটি দল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে চার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পদ্ধতি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার আলোচনা থেকে ওয়াকআউট করেছে। আপনারা শহীদদের রক্তের সঙ্গে ওয়াকআউট করতে পারেন না। আমাদের সামনে পুরো বাংলাদেশের একটিই লক্ষ্য, সেটি হলো সংস্কার। এই মুহূর্তে রাষ্ট্রের দরকার সংস্কার ও বিচার। এরপর দরকার নির্বাচন।’
সোমবার (২৮ জুলাই) বিকালে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রার’ অংশ হিসেবে ময়মনসিংহ নগরের টাউন হল চত্বরে আয়োজিত পথসভায় এসব কথা বলেন তিনি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে চার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পদ্ধতি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার আলোচনা থেকে দুপুরে কিছু সময়ের জন্য ওয়াকআউট করেছিল বিএনপি। দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনার শুরুতেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বৈঠক থেকে বের হয়ে যান। তবে কিছু সময় পর বিএনপির প্রতিনিধি দল আবার আলোচনায় যোগ দেয়। প্রস্তাবিত সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিরীক্ষক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিএনপি অংশ নেবে না বলে আগেই জানিয়েছিল। ওই ওয়াক আউটকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য দেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
ময়মনসিংহের প্রশাসন জুলাই শহীদ ও আহতদের পরিবারের খোঁজখবর নিচ্ছে না উল্লেখ করে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘এখানের প্রশাসন শহীদ ও আহতদের পরিবারের কথা শুনছে না। ভবিষ্যতে যদি কোনও শহীদ কিংবা আহতের পরিবারের সদস্য আপনাদের চেয়ারের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, তাহলে ছাত্র-জনতা ওই চেয়ার নিয়ে আসবে। অবশ্যই আপনাদের শহীদ ও আহতদের পরিবারের কথা শুনতে হবে।’
সভায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিরীক্ষক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধানসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। এগুলো আমাদের লাগবে। নির্বাচনের আগে এগুলো সংস্কার করতে হবে। আমরা আগেই বলেছি, এসব প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষ নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিটি করতে হবে। নিরপেক্ষ প্রশাসন, নিরপেক্ষ পুলিশ ও নিরপেক্ষ আদালত আমরা প্রত্যাশা করি।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কথা বলি। আমরা চাই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। কিন্তু আপনারা চান চাঁদাবাজি। এই জিনিসগুলো আমরা বরদাশত করবো না। আমাদের লাখ লাখ নেতাকর্মীর দরকার নেই। চাঁদাবাজির অভয়াশ্রম এনসিপিতে হবে না।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, শহীদ সাগরের বাবা আসাদুজ্জামান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিল, যুগ্ম সদস্যসচিব ও ময়মনসিংহ জেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী জাবেদ রাসিন ও কেন্দ্রীয় নেতা আবুল বাসার প্রমুখ।
তাসনিম জারা বলেন, ‘দেশ যেন একটা পরিবারের কাছে কুক্ষিগত না থাকে, সেজন্য সংস্কার প্রয়োজন, নতুন সংবিধান প্রয়োজন।’
সামান্তা শারমিন বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে নতুন করে সাজাতে চেয়েছি। জুলাই পদযাত্রার প্রথম ১৫ দিন কোনও ঝামেলা ছাড়াই পদযাত্রা করেছি। কিন্তু এখন এনসিপিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের আইনগত ভিত্তি থাকতে হবে। এ নিয়ে কোনও টালবাহানা চলবে না।’
এর আগে বিকাল ৩টার দিকে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ জামালপুর থেকে ময়মনসিংহে আসেন। পরে স্থানীয় একটি হোটেলে ময়মনসিংহে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় শহীদদের পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেন। সেখান থেকে নেতৃবৃন্দ ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড মহিলা কলেজের সামনে শহীদ সাগর চত্বরে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে সেখান থেকে পদযাত্রা নিয়ে সি কে ঘোষ রোড, রামবাবু রোড, নতুন বাজার ও জিলা স্কুল মোড় হয়ে টাউন হল প্রাঙ্গণে পথসভায় মিলিত হন নেতারা।