জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, আগামীর বাংলাদেশে আমরা মিডিয়াকে দালাল হিসেবে দেখতে চাই না। কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে মিডিয়াকে দেখতে চাই না। ২৪ পূর্ববর্তী কয়েকটি মিডিয়া অন্ধের মতো একটি দলের দালালি করেছে। তাদের সংবাদকর্মী যেসব মিডিয়াতে কাজ করে আজকে তারা সেটা বলতেও লজ্জা পায়। আমরা চাই না ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে কোনও মিডিয়ার এমন করুণ দশা হোক।’
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র অংশ হিসেবে টাঙ্গাইল শহরের নিরালা মোড়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘টাঙ্গাইলে মারুফ হত্যার আসামিদের ধরার তৎপরতা আমরা লক্ষ করিনি। এখনও টাঙ্গাইলের কিছু ব্যক্তি কিছু দল কিছু গোষ্ঠী জুলাই-আগস্টের নিহতদের বিচারকে সামনের দিকে নিতে বাধাগ্রস্ত করছে। তারা মামলা বাণিজ্য করছে। আমরা চিনে রাখছি কারা এই মামলা বাণিজ্য করছে। গণ-অভ্যুত্থানের সময়ে খুব অল্পসময়ে খুনি হাসিনা পালিয়ে গিয়েছিল। এজন্য ওই সময় আমাদের কিছু সিদ্ধান্ত দ্রুত নিতে হয়েছিল। কিন্তু এখন আমরা প্রত্যেকটা স্টেপ পর্যবেক্ষণ করছি। কোন মিডিয়া কার হয়ে কাজ করছে, কোন প্রশাসন জনগণের উদ্দেশ্য সার্ভ না করে কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য সার্ভ করছে—সেটা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের কাছে চাঁদাবাজির একটাই পরিচয়, সেটা হচ্ছে তারা চাঁদাবাজ। এই বাংলাদেশে আর কোনও চাঁদাবাজি করতে দেওয়া হবে না। কেউ যদি চাঁদাবাজকে প্রটেকশন দেওয়ার চেষ্টা করে, তাদের চাঁদাবাজির ভাগীদার হিসেবে বিবেচিত করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত দিনে তাদের পছন্দের জেলা ব্যতীত বাকি জেলাগুলোকে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এই টাঙ্গাইল জেলা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলাতে থাকতে পারতো। কিছু দলীয় স্বার্থ হাসিল করতে এত বড় একটি ঐতিহ্যবাহী জেলার স্বার্থকে বিসর্জন দিতে হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, দেশের বাইরেও এই টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পের পরিচিতি রয়েছে। শুধু প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই তাঁতশিল্পকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করা হয়েছে। এই দেশে শুধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। অথচ মানুষ যাদেরকে দেখে রাজনীতি শিখবে এ কে ফজলুল হক, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মতো মানুষদেরকে এককোণে রাখা হয়েছে। কিন্তু ভাসানীর মতো লোকদেরকে ইতিহাস থেকে এককোণে রাখা সম্ভব না। ভাসানী হল থেকে সারা দেশে সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়তে পারতো। অথচ শুধু একজন মানুষকে পূজা করতে এসব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী ভাসানী হল এখন মাদকের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। কিছু জেলায় হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ টাঙ্গাইলের যমুনা পাড়ের মানুষদের জন্য তেমন বরাদ্দ আসেনি। বরং যা এসেছে তা তাদের নেতাকর্মীরা লুটপাট করে খেয়েছে।’
প্রশাসনকে উদ্দেশ করে সারজিস বলেন, ‘২৪ পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বাংলাদেশের জন্য দেখতে চাই, দেশের মানুষের জন্য দেখতে চাই। আমরা প্রশাসনকে কোনও দল, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর দালাল হিসেবে দেখতে চাই না। কোনও দল বা গোষ্ঠীর অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য দেখতে চাই না।’
সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়কারী নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, উত্তরাঞ্চলের সংগঠক আজাদ খান ভাসানী, টাঙ্গাইল জেলার মুখ্য সমন্বয়কারী মাসুদুর রহমান রাসেলসহ কেন্দ্রীয় ও জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, তারা টাঙ্গাইল সার্কিট হাউসের সামনে থেকে পদযাত্রা নিয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশস্থল শহীদ মিনার চত্বরে আসেন।
এদিকে, এদিন যেকোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সমাবেশস্থলসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে দায়িত্ব পালন করেন।