Swadhin News Logo
বৃহস্পতিবার , ৩১ জুলাই ২০২৫ | ৩১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. best
  2. cassinoBR
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও প্রকৃতি
  5. ক্যাম্পাস
  6. খেলাধুলা
  7. চাকরি
  8. জাতীয়
  9. জোকস
  10. তথ্যপ্রযুক্তি
  11. দেশজুড়ে
  12. ধর্ম
  13. নারী ও শিশু
  14. প্রবাস
  15. বই থেকে

আক্রান্ত বাড়লেও চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার কিট নেই

প্রতিবেদক
Nirob
জুলাই ৩১, ২০২৫ ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ
আক্রান্ত বাড়লেও চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার কিট নেই

বন্দর নগরী চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর পাশাপাশি চিকুনগুনিয়ায় রোগে আক্রান্তের হার বাড়লেও সরকারি হাসপাতালে নেই রোগ নির্ণয়ের কিট। যে কারণে সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা থাকলেও নেই চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা ৩০০ টাকা করে নেওয়া হলেও চিকুনগুনিয়ায় রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষায় নেওয়া হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর বুধবার (৩০ জুলাই) পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮৬৫ জন। এর মধ্যে শিশু ১৪৬, পুরুষ ৪৬৬ ও মহিলা ২৫৩ জন। অপরদিকে একই সময়ে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯৮৪ জন।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের হার বেশি। তবে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ের কিট থাকলেও চিকুনগুনিয়া রোগ নির্ণয়ের কিট মজুত নেই। চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার কিট-এর চাহিদা চেয়ে ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

গত ২৮ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম জেলায় বর্তমানে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে শিশুসহ অধিকাংশ চট্টগ্রামের জনসাধারণ ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হয়ে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত ২৮ জুলাই পর্যন্ত মোট ৮২৭ ডেঙ্গু রোগী, ৮০৩ জন চিকুনগুনিয়া রোগী চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ল্যাবরেটরি, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইনফেকসাস ডিজিজে (বিআইটিআইডি) পিসিআর (আরটি-পিসিআর) ল্যাব থাকলেও চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার কিট না থাকায় সরকারি পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা সম্ভবপর হচ্ছে না। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ল্যাবরেটরিতে র‍্যাপিড টেস্ট কিট (স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত) চালু থাকলেও উপজেলা পর্যায় এই পরীক্ষা করা সম্ভবপর হচ্ছে না। চিকুনগুনিয়া প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় রোগ নির্ণয়ের জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক র‍্যাপিড টেস্ট কিট সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সবিনয় অনুরোধ করা হলো।’

এদিকে, সোমবার (২৮ জুলাই) মহানগরীর বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বিশেষ আলোচনা সভায় মিলিত হন চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম। চলমান ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতিতে রোগ নির্ণয় প্রক্রিয়া সহজ ও হয়রানিমুক্ত করতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষার ফি সমন্বিতভাবে একক হারে নির্ধারণ করা যায় কি না, তা বিবেচনা করতে হবে। একইসঙ্গে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে রোগ নির্ণয় পরীক্ষার মূল্য তালিকা দৃশ্যমান স্থানে টাঙিয়ে রাখার নির্দেশ দেন তিনি। সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, চিকুনগুনিয়া রোগ নির্ণয়ের টেস্টের সর্বোচ্চ ফি চার হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যা মঙ্গলবার থেকে কার্যকর করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে উপস্থিত সবাই সম্মতি দেন।

চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। এই রোগে আক্রান্ত জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে উচ্চমাত্রার জ্বর, শরীরে তীব্র ব্যথা, কখনও ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। অনেক সময় জ্বর সেরে গেলেও কয়েক সপ্তাহব্যাপী জয়েন্টের ব্যথা থেকে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবুল ফয়সাল মো. নুরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এই মৌসুমে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ছড়াচ্ছে যাদের উপসর্গ প্রায় একই। তবে অধিকাংশ রোগীই শেষ পর্যন্ত চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন।’

এদিকে, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে জ্বরে আক্রান্তদের ভিড় বাড়ছে। পাশাপাশি গিঁটে ব্যথা ও র‌্যাশে আক্রান্ত এবং কোনও কোনও পরিবারের একাধিক সদস্য চিকিৎসকের কাছে আসছেন। আতঙ্ক ছড়ালেও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে নেই কার্যকর কোনও উদ্যোগ।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে ব্যথানাশক ওষুধ বেশি খেলে ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই জ্বর হলে নিজে নিজে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

নগরীর চকবাজার থানাধীন চন্দনপুরা এলাকার বাসিন্দা আবু হোসাইন খান বলেন, ‘আমি জ্বর এবং ব্যথা নিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ ঘরে বিশ্রামে ছিলাম। প্রথমে আমার জ্বর দেখা দেয়। এর পরপরই মাথা ব্যথা, শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা শুরু হয়। ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হলে নেগেটিভ আসে। পরবর্তী পরীক্ষায় চিকুনগুনিয়া পজিটিভ আসে। জ্বর সেরে গেলেও এখনও শরীর দুর্বল এবং জয়েন্টে ব্যথা আছে।’

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া মশাবাহিত রোগ। এ রোগ থেকে বাঁচতে হলে মশা মারতে হবে এবং মশার কামড় থেকে বাঁচতে হবে। তবে নগরীর বাসিন্দাদের অভিযোগ, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগ বহুগুণ বাড়লেও ওষুধ ছিটাতে দেখা যায় না সিটি করপোরেশনের কর্মীদের। এদিকে, থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে দিনের পর দিন বিভিন্ন স্থানে জমে থাকছে পানি। এতে বাড়ছে মশার প্রজনন। এমন পরিস্থিতিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম মাহী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মশা নিয়ন্ত্রণে সারা বছর স্প্রে ও ফগিং কার্যক্রম চলমান আছে। মশার হটস্পট ধরে ক্রাশ কর্মসূচির কার্যক্রম চলমান আছে। ওষুধ ছিটানোর জন্য ২১০ জন কর্মী আছেন। তারা নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে কাজ করছেন। এর মধ্যে বড় ওয়ার্ডগুলোতে ৭ জন এবং ছোট ওয়ার্ডগুলোতে ৫ জন ওষুধ ছিটানোর জন্য কর্মরত আছেন। এর বাইরে ৭২ জন সদস্য নিয়ে ছয়টি স্পেশাল টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমগুলো ডেঙ্গু রোগী যেখানে শনাক্ত হচ্ছে সেসব এলাকায় নিয়মিত ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, ‘আমাদের কাছে যে পরিমাণ জ্বরের রোগী আসছে, তার প্রায় ৮০ শতাংশেরই চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ রয়েছে। পরীক্ষার খরচ বেশি হওয়ায় অনেকে ল্যাবে যাচ্ছেন না। তাই লক্ষণ বিবেচনায়ই চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। হাসপাতাল ও ব্যক্তিগত চেম্বারে এখন ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়ার রোগীই বেশি।’

এ প্রসঙ্গে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমানে নানা ধরনের জ্বরে ভুগছেন চট্টগ্রামের মানুষ। যার মধ্যে রয়েছে- চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, সাধারণ ভাইরাস জ্বর (ফ্লু) ও করোনাভাইরাসজনিত জ্বর। এবার ডেঙ্গু রোগীর পাশাপাশি চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তবে হাসপাতালে বেশি ভর্তি হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া মশাবাহিত রোগ। এ রোগ থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই মশা নিধন করতে হবে। অর্থাৎ মশার কামড় থেকে বাঁচতে হবে।’

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীর পাশাপাশি চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। এ জন্য সচেতনতা প্রয়োজন। নগরী ও জেলায় আমরা সচেতনতার জন্য লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে ব্যথানাশক ওষুধ বেশি খেলে ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই জ্বর হলে নিজে নিজে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক

আপনার জন্য নির্বাচিত