রাজশাহীর দুর্গাপুরে ‘বাংলার গায়েন’ রিয়েলেটি শোর কণ্ঠশিল্পী তরিকুল ইসলাম ডালিম ওরফে গামছা ডালিম (৩৬) বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বেলা ১২টার দিকে উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে একটি গভীর নলকূপে (ডিপ টিউবওয়েল) বিদ্যুৎ সংযোগ মেরামতের কাজ করার সময় এ ঘটনা ঘটে।
তরিকুল ইসলাম ডালিম দুর্গাপুর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন অফিসের সহকারী ইলেকট্রিশিয়ানের চাকরি (মাস্টার রোলে) করতেন। তিনি দুর্গাপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের হরিপুর গ্রামের আয়ুব আলীর ছেলে।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুরুল হোদা জানান, পারিবারিকভাবে কোনও অভিযোগ না থাকায় মরদেহ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
মৃতের চাচা সাইদুর রহমান জানান, ডালিম বরেন্দ্র অফিসের একজন ইলেকট্রিশিয়ান। বৃহস্পতিবার তিনি শ্রীপুর গ্রামে একটি গভীর নলকূপে বৈদ্যুতিক সমস্যা দেখা দেয়। খবর পেয়ে ডালিম সমস্যা সমাধানের জন্য সেখানে যান। এরপর ছাদের উপরে লোহার মই দিয়ে কাজ করার সময় বিদ্যুতের তারের সঙ্গে লেগে যায় মইটি। সে সময় সে ছিটকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে স্থানীয়রা খবর পেয়ে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ডালিমের স্ত্রী ও ছোট দুটি মেয়েসন্তান রয়েছে।’
প্রতিবেশী রঞ্জু বলেন, ‘নিহত ডালিম বাউল “গামছা ডালিম” নামে পরিচিত। ছোটবেলা থেকেই গান-বাজনা নিয়ে থাকতেন। দেশে অনেক গানের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। বেসরকারি বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলেও গান করেছেন তিনি। আরটিভি রিয়েলেটি শো বাংলার গায়েন প্রতিযোগিতায় ৩০তম স্থান অধিকার করেছিলেন। ডালিম গানের পাশাপাশি গত ১০ বছর থেকে দুর্গাপুর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন অফিসে মাস্টাররোলে সহকারী ইলেকট্রিশিয়ানের চাকরি করে আসছেন। তিনি স্থানীয় মানুষের কাছে একজন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।’
এদিকে, এমন ঘটনায় শিল্পী সমাজ ও উপজেলা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাদ এশা রাত ৯টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে ডালিমকে দাফন করা হবে।
জানা গেছে, ‘জীবন গাড়ির নাইরে ব্যাক গিয়ার’— মাত্র তিন দিন আগে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে এ কথাগুলো লিখেছিলেন বাউল ডালিম। তার ঠিক পরদিনই আপলোড করেন বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারের একটি ছবি।
কে জানতো, এমন এক ট্রান্সফরমার মেরামত করতে গিয়েই না-ফেরার দেশে পাড়ি জমাবেন তিনি!
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৈদ্যুতিক লাইনের ত্রুটি সারাতে গিয়ে হঠাৎ একটি শর্ট সার্কিটে শক লাগে। সঙ্গে সঙ্গেই পাশের ধানক্ষেতে ছিটকে পড়েন ডালিম। এরপর আর জ্ঞান ফেরেনি।
ডালিমের অকাল মৃত্যুতে দুর্গাপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্থানীয় শিল্পীরা জানিয়েছেন, লোকজ সংগীতের প্রতি তার গভীর অনুরাগ ছিল। গানের চর্চা করে অনেকদূর যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি।













