লালমনিরহাটের পাটগ্রামে দহগ্রাম সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির বিরাজ করছে। বিজিবিকে বিএসএফ জানিয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আলোকে তারা সীমান্তে বেড়া নির্মাণ করছে।
গত শুক্রবার দহগ্রামের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এরপর থেকেই সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দেখা যায়। তবে শুক্র ও শনিবারের চেয়ে আজ রোববার উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কিছুটা শান্ত রয়েছে। বিজিবি-বিএসএফের পক্ষ থেকে বাড়ানো হয়েছে টহল ও নজরদারি।
রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, দহগ্রামের সরকারপাড়া এলাকায় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবি টহল দিচ্ছে। ওই সীমান্তের ডিএমপি ৮/৪১ শূন্য রেখার একেবারে পাশে দিয়ে বিএসএফ শ্রমিকদের নিয়ে এঙ্গেলপাতি দিয়ে চার ফুট উচ্চতার প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করার পর ঘটনাস্থল থেকে সরে গেছে।বিজিবি জানায়, শুক্রবার দহগ্রাম আঙ্গরপোতা এলাকায় শূন্য লাইন বরাবর বিজিবির বাধার মুখে উভয়পক্ষে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফলে বিজিবি রংপুর সেক্টর কমান্ডার এবং বিএসএফের জলপাইগুড়ি সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে একটি স্পট মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। ওই মিটিংয়ে রংপুর ৫১ বিজিবির অধিনায়ক ও বিএসএফ ৬ এবং ৪০ বিএসএফের অধিনায়কসহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বিএসএফ বিজিবিকে জানায়, তিনবিঘা করিডোর এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত দহগ্রাম আঙ্গরপোতা এলাকার সাধারণ মানুষকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে তিনবিঘা করিডোর দিয়ে যাতায়াতের জন্য ২০১০ সালে ভারত সরকার এবং বাংলাদেশের হাসিনা সরকারের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তি মোতাবেক বিএসএফ ভারতীয় লোকজনের সহায়তায় দহগ্রাম এলাকায় শূন্য লাইন বরাবর চার ফুট উচ্চতার এক সারিবিশিষ্ট কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করবে। ফলে বিএসএফ শ্রমিকদের নিয়ে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু করে।
সূত্র জানায়, সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের ওই বৈঠকে উভয়পক্ষের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয় যে পরবর্তী সময়ে উভয় দেশের ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক পর্যায়ে সরেজমিনে যৌথ সমন্বয়ের মাধ্যমে পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত সকল ধরনের নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকবে।
রংপুর ৫১ বিজিবির সহকারী পরিচালক (এডি) পরিচালক ওমর খসরু আমার দেশকে বলেন, আমরা কঠোর অবস্থানে আছি, এখানে আমাদের জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে বিএসএফ এখান থেকে সরে গেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। বিজিবি টহল বাড়ানো হয়েছে।
উল্লেখ্য- গত ৭ জানুয়ারি রাতে উপজেলার ধবলসুতি সীমান্তে ল্যাম্পপোস্ট স্থাপনের চেষ্টা করে বিএসএফ। পরে বিজিবির বাধার মুখে সেটি সরিয়ে নেওয়া হয়। তারও আগে গত ১ জানুয়ারি পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়নের সরকারপাড়া সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও ল্যাম্পপোস্ট স্থাপনের চেষ্টা করলে বিজিবির প্রতিবাদ ও বাধার মুখে সেখান থেকেও ফেরত যায় বিএসএফ। এ ঘটনায় লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে উত্তেজনা চরম উত্তেজনা বিরাজ করে।