তিস্তা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। এতে নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ও ৯টায় ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ওই পয়েন্টে বিপদসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ পাঠক (পানি পরিমাপক) নুরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই পানি আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বুধবার সকাল ৬টায় (১৩ আগস্ট) পানি বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, বুধবার সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এতে আতঙ্কে রয়েছেন তিস্তা বেষ্টিত চর ও চরগ্রামের বানভাসি মানুষ।
ডালিয়া ডিভিশনের উপসহকারী প্রকৌশলী (পানি শাখা) তহিদুল ইসলাম বলেন, ‘উজানের ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির ফলে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে বন্যা হতে পারে। ইতোমধ্যেই নিম্নাঞ্চলগুলো তলিয়ে গেছে। এ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ উপজেলার নদী বেষ্টিত চর ও চরের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে হাজারও মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এদিকে, জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা ও শৌলমারী, কৈমারীও ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের তিস্তা নদী বেষ্টিত প্রায় ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় ১০ হাজার পারিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
একই উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন বলেন, ‘তিস্তার পানি বাড়া কমায় বানভাসিদের ভোগান্তি কমছে না। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির পর আবারও বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় নিন্মাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। এতে বানভাসি মানুষ আতঙ্কে দিন যাপন করছে।
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সারা রাত ধরে নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে ঝাড়শিংহেশ্বর চর গ্রাম, পূর্বছাতনাই গ্রামের দুই হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে দিনমজুর, ফসলি জমি, পুকুরের মাছ ও আমন ধানের বীজতলা।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, আজ সকাল ৬টায় হঠাৎ করে উজানের ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ও ৯টার দিকে আরও ৪ সেন্টিমিটার বেড়ে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইস গেট খুলে রাখা হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণে সার্বক্ষণিক কাজ করছে পাউবোর পানি শাখা।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরানুজ্জামান বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢলে ও ভারী বর্ষণে তিস্তার পানি আজ সকাল ৬টায় ১১ ও ৯টায় তা বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বন্যা এলাকায় নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে তাদের (বানভাসি) উঁচু জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

















