চট্টগ্রামে দিন দিন বাড়ছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া। মাত্র ১৫ দিনে এ দুই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। অথচ ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী বাড়লেও চট্টগ্রামে সরকারিভাবে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও নেই চিকুনগুনিয়ার পরীক্ষা। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে চিকুনগুনিয়ার কিট চেয়ে স্বাস্থ্য বিভাগে চিঠি দেওয়া হলেও গত ১৯ দিনেও সাড়া মেলেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা ৩০০ টাকা করে নেওয়া হলেও চিকুনগুনিয়ায় রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষায় নেওয়া হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। যদিও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে চিকুনগুনিয়া পরীক্ষায় ৪ হাজার ৫০০ টাকা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনা মূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা হলেও নেই চিকুনগুনিয়ার কিট।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে বর্তমানে ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ৬টি থানা এলাকায়। বিভিন্ন ল্যাব ও হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত তথ্যে তা জানা গেছে। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে রয়েছে- হালিশহর, বন্দর, বায়েজিদ, আগ্রাবাদ, ডবলমুরিং ও সদরঘাট। এই এলাকাগুলোতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে মশকনিধন ক্রাশ প্রোগ্রামের আওতায় সকালে ও বিকালে দুই বেলা প্রত্যেক বাড়ি ও আশপাশের এলাকায় কীটনাশক ছিটানোর জন্য বলা হয়েছে। অথচ বাস্তবে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের দিনে দুইবার দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এদিকে, চট্টগ্রামে গেলো জুলাই মাসে এবং চলমান আগস্ট মাসে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার ভয়ংকর রূপ দেখছে চট্টগ্রামের মানুষ। এর মধ্যে গেলো জুলাই মাসে ৪৩০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এবং মারা গেছেন ৭ জন। চলতি আগস্টে এখন পর্যন্ত ২৮৪ জন আক্রান্তসহ ৫ জন মারা গেছেন। অথচ গেলো বছর ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ১৯৮ জন আক্রান্তসহ ১ জন মারা গেছেন এবং ওই বছরের পুরো আগস্ট মাসে ২০২ জন আক্রান্তসহ ১ জন মারা যান। অপরদিকে শুধু চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে এক হাজার ছাড়িয়েছে। তবে গেলো বছরের চিকুনগুনিয়ার তথ্য নেই জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর হার অত্যন্ত বেশি। তবে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ের কিট থাকলেও চিকুনগুনিয়া রোগ নির্ণয়ের কিট মজুত নেই। চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার কিটের চাহিদা চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠি দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত আসেনি।’
গত ২৮ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম জেলায় বর্তমানে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে শিশুসহ অধিকাংশ চট্টগ্রামের জনসাধারণ ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত হয়ে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত ২৮ জুলাই পর্যন্ত মোট ৮২৭ ডেঙ্গু রোগী, ৮০৩ জন চিকুনগুনিয়া রোগী চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ল্যাবরেটরি, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইনফেকসাস ডিজিজে (বিআইটিআইডি) পিসিআর (আরটি-পিসিআর) ল্যাব থাকলেও চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার কিট না থাকায় সরকারি পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ল্যাবরেটরিতে র্যাপিড টেস্ট কিট (স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত) চালু থাকলেও উপজেলা পর্যায় এই পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। চিকুনগুনিয়া প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় রোগ নির্ণয়ের জন্য জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক র্যাপিড টেস্ট কিট সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সবিনয় অনুরোধ করা হলো।
এদিকে, গত ২৮ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানো চিঠিতে ওই দিন পর্যন্ত আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগী ছিল ৮২৭ এবং চিকুনগুনিয়া রোগী ছিল ৮০৩ জন। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যানে বলা হয়, ওই দিন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ১৫৯ জন এবং চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৯৬৭ জন। অর্থাৎ স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠি পাঠানোর পর গত ১৮ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত শনাক্ত হয় ৩৩২ জন এবং চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ১৬৪ জন।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুর রব বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের এই ঊর্ধ্বগতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম যথেষ্ট কার্যকর হয়নি। বিশেষ করে বর্ষার শুরুতেই যদি মশা নিয়ন্ত্রণে আনা যেতো, এ পরিস্থিতি কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হতো।’