মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ডাকাতি করতে গিয়ে স্থানীয় লোকজনকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেটি বিস্ফোরিত হয়ে ডাকাত দলের এক সদস্য নিহত হয়েছে। এ সময় ডাকাত দলের দুই সদস্যকে পিটিয়ে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা। একই সময়ে ডাকাত দলের হামলায় স্থানীয় দুজন আহত হন।
শনিবার (১৬ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের ভাটি বলাকী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের ধাওয়ায় পালিয়ে যাওয়ার সময় নারায়ণগঞ্জের চর কিশোরগঞ্জ থেকে দুই ডাকাতকে আটক করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে নিহত ও আহত ডাকাতদের পরিচয় জানা যায়নি। তাদের হামলায় আহতরা হলেন- ভাটি বলাকী গ্রামের ইসহাক ব্যাপারীর ছেলে আলম (৩৭) ও মো. রাসেলের ছেলে সোহাগ (১৬)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হোসেন্দী ইউনিয়নের ভাটি বলাকী গ্রামসংলগ্ন মেঘনা নদীতে কয়েকটি বাল্কহেড নোঙর করা ছিল। শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে স্পিডবোট নিয়ে সেখানে ডাকাতির চেষ্টা করে ডাকাত দলের সদস্যরা। কিন্তু নদীর জেলে ও বাল্কহেডের শ্রমিকদের কারণে ডাকাত দল ফিরে যায়। শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আবারও স্পিডবোট ও একটি ট্রলার নিয়ে ডাকাতি করতে আসে। খবর পেয়ে ভাটি বলাকী গ্রামের লোকজন ট্রলার নিয়ে ধাওয়া দেন। এ সময় ডাকাতরা গ্রামবাসীকে লক্ষ্য করে ককটেল ছোড়ে। অসাবধানতাবশত ডাকাত দলের এক সদস্যের হাতে ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এতে ট্রলারে থাকা ওই ডাকাতের এক হাতের আঙুলসহ কবজির কিছু অংশ উড়ে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে স্পিডবোটে থাকা পাঁচ-ছয় ডাকাত পালিয়ে যায়। পরে ট্রলারে থাকা ডাকাত দলের তিন সদস্যকে ধাওয়া দিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার চর কিশোরগঞ্জ এলাকা থেকে আটক করে স্থানীয়রা। উত্তেজিত জনতা তাদের পিটুনি দিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যায় বিস্ফোরণে আহত ডাকাত দলের ওই সদস্য।
নারায়ণগঞ্জের কলাগাছিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক সালেহ আহম্মেদ পাঠান বলেন, ‘আমাদের কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী ডাকাতরা ভোরে সোনারগাঁয়ের আনন্দবাজার এলাকা থেকে একটি জেলেদের ট্রলার ছিনতাই করে। ছিনতাই করা ট্রলার ও স্পিডবোট নিয়ে কয়েকজন ডাকাত ভাটি বলাকী এলাকায় ডাকাতি করতে আসে। স্থানীয়রা বাধা দিলে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। সকাল পৌনে ১০টার দিকে তিন ডাকাতকে পিটুনি দিয়ে জনতা আমাদের হাতে তুলে দেয়। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। চিকিৎসার জন্য নারায়ণগঞ্জের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর ককটেল বিস্ফোরণের শিকার ডাকাত সদস্য মারা যায়। বাকি দুজন চিকিৎসাধীন। ঘটনাস্থল থেকে দুটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করেছি আমরা।’
ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. জহিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একজনকে মৃত ও দুজনকে আহত অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে আনা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির হাতের কবজি ককটেল বিস্ফোরণে উড়ে গেছে। তবে তাদের নাম-পরিচয় নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি পুলিশ।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা নৌ-পুলিশের সুপার মো. আলমগীর হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডাকাতি করতে এসে গ্রামবাসীকে লক্ষ্য করে ককটেল ছোড়ার সময় বিস্ফোরণে এক ডাকাত নিহত হয়েছে। আহত দুজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। এখনও তাদের নাম-পরিচয় পাইনি। নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’
গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘এক ডাকাত নিহত দুজন আহতের খবর পেয়েছি। ঘটনাটি নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সীমানার মধ্যে পড়ায় বিষয়টি তারা দেখছে।’

















