রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো সোমবারও (১৮ আগস্ট) আমরণ অনশন করেছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের দাবি, সেপ্টেম্বরের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তারা অনশন চালিয়ে যাবেন।
এদিকে, অনশনে অংশ নেওয়া দুই শিক্ষার্থী সোমবার দুপুর ১২টার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তারা হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন আছেন। এই দুই জন হলেন- সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাহিদ মাহি।
এদিকে সোমবার দিনভর উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকত আলী, প্রক্টর ফেরদৌস রহমান ছাত্র উপদেষ্টা ইলিয়াছ আহামেদ রেজিস্ট্রার হারুনর রশীদ, প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশনরত শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। তাদের ১০ দিনের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে সময় চান। কিন্তু অনশনরত শিক্ষার্থীরা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে অনশনরত শিক্ষার্থী আরমান ও নয়ন বলেন, জুলাই আন্দোলনের পর ৮ আগস্ট থেকে বেরোবির শিক্ষার্থীরা রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। এই বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আন্দোলন করতে হবে কেন? আমরা মনে করি, ইউজিসি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ দেবে এবং একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র সংসদ গঠন করা হবে।
তারা বলেন, এ আন্দোলনে আমাদের দুই সহকর্মী ইতিমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরও দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে যদি আমাদের জীবন দিতে হয় তাতেও আমরা প্রস্তুত আছি। তারা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন অব্যাহত রাখবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে উপাচার্য শওকত আলী বলেন, দেশের নতুন কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না। এর জন্য আইন লাগবে। আমরা ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউজিসিকে চিঠি দিয়েছি। উপদেষ্টাকে জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বিষয়টি তারাও দেখছেন। আমি অনশনরত শিক্ষার্থীদের কাছে বলেছি, ১০ দিনের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ সেভাবে কাজ করছে। আন্দোলনরতরা বিষয়টি অনুধাবন করবেন এবং অনশন প্রত্যাহার করবেন এটা আশা করি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, দেশের চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না। এ জন্য আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। তবে বেরোবির শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে, সেটা ইউজিসিসহ সবাই জানেন। এ জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে ইউজিসি। আশা করা হচ্ছে, দ্রুত প্রয়োজনীয় নির্দেশনা আসবে।
এদিকে পৃথক পৃথকভাবে অনশন স্থলে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে ছাত্রদল ও ছাত্র শিবির।
ছাত্রদলের বেরোবির আহ্বায়ক আমিন আল আমিনের নেতৃত্বে ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ এবং বেরোবি ছাত্র শিবিরের সভাপতি সুমন সরকারের নেতৃত্বে নেতৃবৃন্দ এসে অনশনকারীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তারা।
অন্যদিকে সোমবার দুপুরে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হক অনশন স্থলে এসে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইচ্ছে করলেই এটা ঘোষণা দিতে পারে। এ নিয়ে উপচার্যের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়, পরে তারা সেখান থেকে চলে যান।
রবিবার দুপুর ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ৯ শিক্ষার্থী বেরোবিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন। তাদের দাবির সমর্থনে হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
অনশনকারীরা হলেন- আশিকুর রহমান আশিক, জয়, আরমান, নয়নসহ ৯ জন। সোমবার বিকাল সাড়ে ৫টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অনশন অব্যাহত রেখেছেন তারা। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করা পর্যন্ত অনশন অব্যাহত রাখবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

















