গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর মৌজার একমাত্র সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের প্রায় পাঁচ একর জমি দখল, বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্কুলশিক্ষক নিখিল কুমার চৌধুরী। কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে এই স্কুলশিক্ষক প্রশ্ন তুললেন— ‘হিন্দু হওয়াটা কি আমার অপরাধ?’
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি ভূমিদস্যুদের নির্যাতন ও অত্যাচারের বর্ণনা দিয়ে এ প্রশ্ন করেন।
লিখিত বক্তব্যে নিখিল কুমার চৌধুরী জানান, তিনি স্কুলশিক্ষক। গত বছরের ৬ আগস্ট এলাকার মৃত ছোলায়মানের ছেলে চিহ্নিত ভূমিদস্যু মতিয়ার রহমান শামীমের নেতৃত্বে তার ভাই মকছুদার, মোখলেছ ও মুছা মিয়া তাদের পরিবারের প্রায় ৫ একর জমি দখল করে নেয়। পরিকল্পিতভাবে লোকজন নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করা হয়, পরে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে জীবননাশ ও উচ্ছেদের হুমকি দেওয়া হয়।
তার অভিযোগ, এ ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন মহলের দ্বারস্থ হলেও কোনও প্রতিকার পাননি। থানায় মামলা করতে গেলে প্রথমে ওই ভূমিদস্যুদের মামলা গ্রহণ করা হয়, তার মামলা নেওয়া হয় ‘কাউন্টার মামলা’ হিসেবে। এরপর থেকেই তিনি পরিবার নিয়ে নানান হুমকি ও উচ্ছেদ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
শিক্ষক নিখিল কুমার বলেন, ‘১৬ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) ভূমিদস্যুরা পুনরায় লোকজন নিয়ে বাড়ির কলাগাছ, লেবুগাছসহ বিভিন্ন ফলদ গাছ ও বাঁশঝাড় কেটে নিয়ে যায় এবং বাড়ির চারপাশ বাঁশ দিয়ে ঘেরাও করে রাখে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত নথিতে উল্লেখ করা হয়, নিখিল চৌধুরীর পরিবারের স্বত্ব দখলীয় সিএস-৩০৮ ও আরএস-৩৫৮ খতিয়ানভুক্ত ৫.৭২ একর জমি অর্পিত সম্পত্তির ‘খ’ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০১২ সালের ১৫ মে প্রকাশিত গেজেটে সরকার উক্ত সম্পত্তি আইনানুগভাবে অবমুক্ত করে এবং দুটি নামজারি কেসের মাধ্যমে তাদের নামে নামজারির অনুমোদন দেয়। পরে প্রতিপক্ষ আপিল করলেও ভূমি আপিল বোর্ডের ফুলবোর্ড আদালত ও সর্বোচ্চ রাজস্ব আদালতে পরাজিত হয়।
সর্বশেষ ২০২২ সালে তারা আইনি লড়াইয়ে চূড়ান্তভাবে হেরে যায়। তবুও ওই চক্র তাদের অবশিষ্ট সম্পত্তি দখলের জন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নিখিল চৌধুরী।
তিনি প্রধান উপদেষ্টা ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে তার পরিবার ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জরুরি হস্তক্ষেপের দাবি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কামারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান রাশেদ বলেন, আমি নিরুপায়, বিষয়টি এখনও মীমাংসা করা সম্ভব হয়নি।
সাদুল্লাপুর থানার ওসি তাজউদ্দিন খন্দকার বলেন, বিবদমান দুই পক্ষই জমির মালিকানা দাবি করছে। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। তবে সংখ্যালঘু পরিবারটিকে পুলিশ সবসময় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে নিখিল চৌধুরীর ছোট ভাই উৎপল কুমার চৌধুরী, স্ত্রী পলি রাণী, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী শ্যামলী রাণী ও ভাতিজা অর্পণ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

















