দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের মামলায় আসামি করা হয়েছে পাঁচ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে। এতে চেয়ারম্যানরা গ্রেফতার আতঙ্কে পরিষদগুলোতে ঠিকমতো না আসায় স্বাভাবিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় নাগরিকসেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে ইউপি পরিষদের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
গত শুক্রবার বিকালের এ সংঘর্ষের পরের দিন শনিবার রাতে বোয়ালমারী থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে দুই পক্ষ। দুই মামলায় ২২৪ জনের নাম উল্লেখসহ ৮৭৪ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহামুদুল হাসান।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, বিএনপি আগামী সংসদ নির্বাচনে ২৩৮ আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-১ আসনটির মনোনয়ন স্থগিত রেখেছে। এ আসনে কৃষক দলের সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলাম এবং বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দীন মিয়া ঝুনু বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। দুজনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে শুক্রবার বিকালে সংঘর্ষে জড়ান তাদের সমর্থকরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে পাল্ট্পাল্টি হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বোয়ালমারী পৌরসভা, ওয়াপদা মোড় ও আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।
সংঘর্ষের পর একটি মামলা করেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান বাবু। তিনি উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর সমর্থক। এ মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী খন্দকার নাসিরুল ইসলামকে। এ ছাড়া বোয়ালমারী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ মামলায় আসামি হিসেবে ১৮৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। আসামিদের মধ্যে ৬ নম্বরে গুনবহা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম (৫৭), ২২ নম্বরে শেখর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ (৪৮), ১১২ নম্বরে সাতৈর ইউনিয়নের রাফিউল আলম মিন্টু (৪৮), ১১৩ নম্বরে দাদপুরের মোশারফ হোসেন মুশা (৪৭) ও ১৫০ নম্বরে রুপাপাতের মিজানুর রহমান সোনা মিয়ার (৪৪) নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০০ থেকে ২৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
মামলার বাদী মজিবুর রহমান বাবুর অভিযোগ, এই পাঁচ চেয়ারম্যান খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থক। তিনি বলেন, ‘এই পাঁচ জনের মধ্যে শুধু সিরাজুল ইসলাম বিএনপির এবং বাকিরা আওয়ামী লীগের লোক। গত ৫ আগস্টের পর খন্দকার নাসিরের আশ্রয়ে যান এবং তাকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিপুল পরিমাণ টাকা ও লোকজন দিয়ে সহযোগিতা করে আসছেন। শুক্রবারের ঘটনায় এরাই বিপুল লোকের সমাগম ঘটিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালান। এতে আমাদের অনেকে আহত হয়েছেন।’
মামলার পর থেকে এসব ইউনিয়নের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি পরিষদের একাধিক সদস্য ও সচিবদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চেয়ারম্যানরা হঠাৎ হঠাৎ কেউ কেউ পরিষদে আসলেও কিছু সময় থেকেই চলে যান। গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন তারা।
শেখর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম সরদার বলেন, ‘চেয়ারম্যান ঠিকমতো পরিষদে আসছেন না, কোনও একসময় এসে আবার চলে যান। আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া যারা জন্মনিবন্ধনসহ অন্য সেবা নিতে আসছেন সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের জন্য ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
তবে সংঘর্ষ ও মামলা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না দাবি করে দাদপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতিই করি না এবং সম্পৃক্তও নই। ইউনিয়নের প্রতিপক্ষের ইন্ধনে আমাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলার আসামি করা হয়েছে।’
এ ছাড়া সাতৈর ইউপি চেয়ারম্যান চিকিৎসক দেখাতে ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানান এবং বাকি তিন জনের মোবাইল নম্বরে কল দিলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় আরেকটি মামলা করেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও গুনবহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম। তিনি খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থক ও অপর মামলার আসামি। মামলায় ৩৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩০০-৪০০ জনকে আসামি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, ‘ইউনিয়নের নাগরিক সেবায় যেন কোনও ব্যাঘাত না ঘটে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া এমন অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বোয়ালমারী থানার ওসি মো. মাহামুদুল হাসান বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। তবে কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।’

















