আসামের পরেই রয়েছে মেঘের রাজ্য মেঘালয় অরণ্য বেষ্টিত ও জলপ্রপাত মিলে এ রাজ্যের সৌন্দর্য হার মানায় অন্য যেকোনো রাজ্যকে।এ কারণেই মেঘালয়কে বলা হয় প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড। এ রাজ্যে গারো হাজং সহ অনেক ধরনের জনপদের বাস রয়েছে। এরপরেই আছে অরুণাচল প্রদেশ সূর্যোদয়ের আলোকিত এক পাহাড়ের দেশ অরুণাচল।এই রাজ্যের দখল নেওয়ার জন্য চীন বেশ কয়েকবার আক্রমণ চালিয়েছে। ১৯৮৬ সালের ডিসেম্বর মাসে এ রাজ্যটিকে পূর্ণাঙ্গ অঙ্গরাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
এরপরে আছে নাগাল্যান্ড এদের খাদ্যাভ্যাস জীবনযাপন ও সংস্কৃতি অন্য সবার থেকে আলাদা।নাক দেবতার অর্থাৎ সাপের দেশ হলো নাগাল্যান্ড।এই প্রদেশের বেশিরভাগ বাড়ি কাঠের তৈরি,ছোট ছোট কাঠের তৈরি বাড়িগুলো ছড়িয়ে রয়েছে সমগ্র নাগাল্যান্ডে।
মুনিদের দেশ, মনিপুর হলো নয়টি পাহাড় দ্বারা বিস্তৃত একটি ডিম্বাকৃতির উপত্যকা।এ রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোন তুলনা হয় না।রাজ্যের প্রধান আকর্ষণ গুলির মধ্যে অন্যতম হলো ”লোকটাক হ্রদ” যা সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের বৃহত্তম মিষ্টি জলের হ্রদ। বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া ও খাদ্য এবং সংরক্ষণযোগ্য সংস্কৃতির জন্য মনিপুর অনন্য।রাজ্যটির অধিকাংশ অংশ ঘন জঙ্গলে আচ্ছাদিত হওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের বিরল প্রজাতির প্রাণী এখানে প্রায় সময় দেখা যায়।মনিপুরী নৃত্য সমগ্র ভারতে জনপ্রিয়।
মনিপুরের পরেই মিজোরাম।এখানে জাতপাত,লিঙ্গ ও সকল ধরণের বৈষম্য দূরে রেখে সবাই একসঙ্গে বসবাস করে।এরা সব সময় আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলাফেরা করে এবং কোন ধরনের নিয়ম-নীতির মধ্যে বাধা নেই।মনোমুগ্ধকর পাহাড়ে ঘেরা এই রাজ্যটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্বর্গ মিজোরামের পরেই পেয়ে যাবেন ত্রিপুরা।
ত্রিপুরা রাজ্যে অনেক লম্বা সময় ধরে রাজতন্ত্র চলেছে।এ জনগোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি ঐতিহ্য এবং ইতিহাস তাদের সংস্কৃতি গুলো নাচ খাদ্যাভ্যাস পোশাক এবং বিভিন্ন কার্যকলাপের মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকে।
এই সাতটি রাজ্য ভারতের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনলেও ভারত কখনো এই সাতটি রাজ্যকে ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারেনি। যারা অন্যতম কারণ ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে রাজ্যগুলো অনেক দূরে অবস্থিত।এই রাজ্যগুলোর ভাগ্য উন্নয়নে ভারত সরকার তেমন কোন অবদান রাখতে পারেননি।কিন্তু এ রাজ্যগুলো থেকে ভারতের মোট রাজস্বের একটি বড় অংশ গিয়ে থাকে।
স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এই জনগোষ্ঠীগুলো বিভিন্ন সময়ে নিজেদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রাম করেছে ,এই রাজ্য গুলোর মধ্যে বিদ্রোহী সংগঠন আসাম ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট আদিবাসীদের জন্য একটি পৃথক দেশের দাবি করে আসছে।আরেকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা ,যারা ত্রিপুরার স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে আসছে বহুদিন যবৎ।এভাবে মিজোরাম,মেঘালয়, নাগাল্যান্ড এই সকল রাজ্যেও বিভিন্ন সময়ে দেখা দিয়েছে বিদ্রোহ।কিন্তু ভারত সরকার এই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমনে সদা প্রস্তুত রয়েছে।
যার কারণে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে আলোচনা কখনোই থেমে থাকে না। এখানকার আদিবাসীরা মনে করে ভারতের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এই জনগোষ্ঠী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে নিজেদেরকে স্বাধীনভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে। অনেকে মনে করে এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর আন্দোলনের মূল মদদ দাতা চীন।ভারত এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন সময় বিপুল পরিমাণে সামরিক শক্তি নিয়োগ করেছে।যার কারণে তাদের এই মুক্তি আন্দোলন বারবার ব্যর্থ হয়েছে।ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতি সব মিলিয়ে সেভেন সিস্টার্স ভারতের অন্য রাজ্যেগুলো থেকে অনন্য।
তাদের আত্মত্যাগ ও সংগ্রাম ইতিহাসের পাতায় অন্যরকম ভাবে জায়গা করে নিয়ে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ এখনো অনেকটাই অনিশ্চিত একদিকে নিজেদের স্বাধীনতা আন্দোলন অন্যদিকে ভারত সরকারের দমন পীড়ননের ফলে যেন হারিয়ে যেতে বসেছে নিজেদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি।
প্রথম পর্ব দেখুন